DhakaThursday , 15 February 2024
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. খেলাধুলা
  5. জাতীয়
  6. তথ্যপ্রযুক্তি
  7. ধর্ম
  8. ফিচার
  9. বিনোদন
  10. মহিলা অঙ্গন
  11. রাজনীতি
  12. রাজশাহী
  13. শিক্ষা
  14. সারাদেশ
  15. স্বাস্থ্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

‘দই বেচে, বই কিনি’ স্লোগানের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউল হক পাচ্ছেন্ন সমাজসেবায় একুশে পদক

Link Copied!

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ পেশায় দই বিক্রেতা জিয়াউল হক, দই বিক্রির টাকা পরিবারের খরচ মেটানোর পর যা অবশিষ্ট থাকে তা দিয়ে তিনি বই কেনেন। সেই বই তুলে দেন অসহায়-দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে। এভাবেই তিনি হয়ে উঠলেন সাদা মনের মানুষ, পরোপকারী ও একজন সমাজসেবক। এসব কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ তিনি পাচ্ছে একুশে পদক। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার সাদা মনের মানুষ জিয়াউল হক পাচ্ছেন একুশে পদক। তাকে শুভেচ্ছা জানাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ফুল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন তার বাড়িতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শুভেচ্ছা-ভালোবাসায় সিক্ত হচ্ছে তিনি। গত মঙ্গলবার সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত মঙ্গলবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় ১৫ নম্বরে রয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিয়াউল হক। তিনি সমাজসেবায় অবদান রাখায় একুশে পদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন।

জিয়াউল হক (৯১) ১৯৩৮ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার চামামুশরীভূজা গ্রামের এক অতিদরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একুশে পদক পাওয়ার জন্য মনোনীত হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

সৎ মানুষ ও ভালো দই বিক্রেতা হিসেবে তার নাম জেলা থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। তিনি প্রথমত অভাবগ্রস্ত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করেন। বছর শেষে সেই বই ফেরত নিয়ে আসতেন। পরে তিনি স্থানীয় হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় পাঠ্যবই, পবিত্র কোরআন মাজিদ ও এতিমদের পোশাক দেয়া শুরু করেন। বর্তমানে তিনি ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত বিজ্ঞান, কলা ও বাণিজ্য বিভাগে অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দিয়ে আসছেন। জেলা ছাড়া রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরও বই দেন তিনি। যেসব ছাত্রছাত্রী দূর-দূরান্ত থেকে বই নিতে আসেন তাদের যাতায়াত খরচও দিয়ে থাকেন জিয়াউল হক। ঈদে গরিব দুঃখীর মধ্যে কাপড় বিতরণ এবং প্রচন্ড- শীতে দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

জিয়াউল হক বলেন, তার বাবা ছিলেন গ্রামের গোয়াল। ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ার সময় টাকার অভাবে বই কিনে দিতে পারেননি। এ কারণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের সৌভাগ্য হয়নি। একপর্যায়ে বাবার সঙ্গে শুরু করেন দই বিক্রি।

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে মাথায় করে দই বিক্রি করি। ‘দই বেচে, বই কিনি’ স্লোগানে ১৯৬৯ সালে ভোলাহাট উপজেলার মুশরিভূজা গ্রামে নিজের নামে ‘জিয়াউল হক’ সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করি। তিনি বলেন, এরপর থেকেই শুরু হয় আমার সমাজসেবা। এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই প্রদান, গ্রামের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, গরীব-দুঃখীদের বাড়ি নির্মাণ, নলকূপ স্থাপন, দুস্থদের খাদ্য সহায়তা, গরীব শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে বেতন পরিশোধসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাজে আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। আমার মাধ্যমে শত শত মানুষ উপকৃত হচ্ছে।

একুশে পদকের জন্য মনোনীত হওয়ার বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি, একুশে পদক পাবো। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। জিয়াউলের ছেলে মহব্বত আলী বলেন, বাবা একুশে পদকের জন্য মনোনীত করায় আমি খুব খুশি। আমি আমার বাবার অবর্তমানে এই পাঠাগারের হাল ধরব এবং সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

দলদলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজ্জামেল হক চুটু বলেন, জিয়াউলকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করায় আমরা গর্বিত।

উল্লেখ্য, রহনপুর স্কাউট দল, ভোলাহাট প্রেস ক্লাব, খুলনা পিপি কলেজ, জেলা প্রশাসন (১৯৯৩ সালে), চ্যানেল আই (২০০৫), নবাবগঞ্জ নয়াগোলা পাঠাগার, ২০০১ সালে ইটিভি ও ২০০৮ সালে ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সর্বশেষ ইউনিলিভার বাংলাদেশ ২০০৬ সালে তাকে ‘সাদা মনের মানুষ’ পদকে ভূষিত করে।

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।