স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বিভাগের সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মানিকুজ্জামান মানিক ও তার ভাই মুনজুরুজ্জামান মুনের বিরুদ্ধে চাকরি, জমি বিক্রয় ও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে টাকা ধার নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুরে নগরীর একটি রেষ্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তালাইমারী কাজলা এলাকার ভূক্তভোগী ছয়টি পরিবার। তাদের অভিযোগ দুই ভাই প্রতারণা মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনার ভুক্তভোগি তামান্না ইয়াসমিন। তিনি বলেন, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক বিভাগে কর্মরত সহকারী পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মানিকুজ্জামান মানিক রুয়েটে চাকুরী দেওয়া ও ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে নানা প্রলোভন দেখিয়ে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও চেকের বিপরীতে ১৫ লাখ টাকা নেয়। এছাড়াও তার বড় ভাই রাজশাহী হার্ডওয়ার এর সত্ত্বাধিকারী মুনজুরুজ্জামান মুন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ধার হিসেবে ২ লাখ নেন। তারা দুই ভাই মোট ১৭ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন ভাবে ভয় ভীতি দেখিয়ে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়।
আমাদের মধ্যে মাহাবুবুর রহমান (সঞ্জু) জন্ম থেকে একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। রুয়েট কর্মকর্তা মানিকুজ্জামান মানিক চলতি বছরের ১০ জানুয়ারী নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ব্যবসায়িক প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে নগদ ৬ লক্ষ টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয়। তার অফিসে গিয়ে টাকা চাইতে গেলে সে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে অফিস থেকে বের করে দেয়।
এছাড়াও তালাইমারী কাজলা এলাকার বাসিন্দা আশরাফ উজ জামানের কাছ থেকে মানিক তার নিজ দখলীয় জমি বিক্রি করবে বলে ২০২১ সালে একটি বায়না নামা দলিল সম্পাদন করে। সেখানে জমির বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে নগদ ৬ লক্ষ টাকা তার নিকট থেকে গ্রহণ করেন। বায়না নামা দলিলে ছয় মাসের মধ্যে বাকি টাকা পরিশোধ করে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও তা করেনি। প্রতারণার মাধ্যমে টাকাগুলো আত্মসাত করেছে মানিকুজ্জামান মানিক। তার অফিস এবং বাসায় গিয়ে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার তাগাদা দিলেও সে তাতে কর্ণপাত না করে নানা ধরনের হুমকিমূলক কথা বলে ভয়ভিতি দেখায়।
মহানগরীর রানীনগর এলাকার আরেক ভুক্তভোগী মামুনুর রশিদের কাছে ব্যবসায়িক বিশেষ প্রয়োজনের কথা বলে একটি চেকের বিপরীতে নগদ এক লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যে টাকা আজ পর্যন্ত ফেরত দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে একই কায়দায় তাকেও অফিস থেকে বের করে দেন মানিকুজ্জামান মানিক।
এদিকে, মহানগরীর বাজে কাজলা এলাকার নারী নওবাহার খাতুনকে রুয়েটে চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে মানিকুজ্জামান মানিক চেকের বিপরীতে দেড় লাখ টাকা ও তার আপন বড় ভাই মুনজুরুজ্জামান মুন এক লাখ টাকা গ্রহণ করেন। নওবাহার খাতুনের কন্যা তামান্না ইয়াসমিনের কাছে থেকেও চেকের বিপরীতে মানিক ও তার বড় ভাই মুন এক লক্ষ টাকা ও তার জামাতা শাহির কাছে ৫০ হাজার টাকা নেয় চাকুরী দেওয়া নামে।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যবদি তাদের রুয়েটে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হন মানিকুজ্জামান মানিক। বাজে কাজলা এলাকার নওবাহার খাতুনের কন্যা তামান্না ইয়াসমিন ও তার জামাতা শাহি গত বছরের ৩ জুন চাকুরীর সুবাদে দেওয়া টাকা চাইতে গেলে স্বামী-স্ত্রীকে মারপিট, অকথ্য ভাষায় গালি গালাজসহ বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি হুমকি প্রদান করে। এ ঘটনায় বোয়ালিয়া মডেল থানায় তামান্না ইয়াসমিন বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যাহার জিডি নং-১১৬৭, তারিখঃ ১৪/০৬/২৪ ইং। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসআই আহসান হাবিব ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। যা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভূক্তভোগীরা মানিকুজ্জামান মানিক ও তার ভাই মুনজুরুজ্জামান মুনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ ও সুষ্ট বিচার দাবি করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ভূক্তভোগী মাহাবুবুর রহমান সঞ্জু, আশরাফ উজ জামান, মামুনুর রশিদ, নওবাহার ও শাহি।
মানিকুজ্জামান মানিক বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছিল তাদের মধ্যে মাহাবুবুর রহমান সঞ্জু মতিহার থানায় অভিযোগ দিয়েছিল। থানায় বসে ফায়সালা হয়েছে। ঈদের পরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে।
বাকিদের টাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে কারও কাছে টাকা নেওয়া হয়নি। যারা অভিযোগ করছে তারা দাদন ব্যবসায়ী। তাদের অভিযোগ মিথ্যা। তারা কেউ আমার কাছে টাকা পাবে না।